ইয়াহুদিরা যে কারণে জুমআর দিনকে ঈদের মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন

মুসলিম উম্মাহর জন্য নির্ধারিত সাপ্তাহিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতের দিন হলো শুক্রবার। এ দিনের ইবাদতকে ইয়াহুদিরা অনন্য মর্যাদা দেয়ার আক্ষেপ পোষণ করতো। কারণ এ দিন আরাফাতের ময়দানে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাজিল হয় গুরুত্বপূর্ণ খুশির আয়াত। ইসলামের পরিপূর্ণতার আয়াত।

ইয়াহুদিদের ভাষায় আরাফাতের দিন শুক্রবার যদি ইসলামের পরিপূর্ণতার আয়াত তাদের ওপর নাজিল হতো তবে তারা এ দিনটিকে ঈদের দিন তথা সবচেয়ে বেশি খুশির দিন হিসেবে পালন করতো। হাদিসে পাকে এ ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ইয়াহুদি তাঁকে বলল, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদি জাতির ওপর অবতীর্ণ হতো, তবে অবশ্যই আমরা সেই দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম।

তিনি জানতে চাইলেন, (সেটি) কোন আয়াত? সে (ইয়াহুদি আয়াতটি) বলল-
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩)

হজরত ওমর বললেন, ‘এটি যে দিনে এবং যে স্থানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি। তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুমআর দিন।’ (বুখারি)

সুতরাং এ গুরুত্বপূর্ণ দিনে আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য আবশ্যক। কেননা আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন-

‘হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝ।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)

হাদিসে বর্ণিত জুমআর দিনের ফজিলত-
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমআর দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাকের কাছে জুমআর দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

– হে মুসলমানগণ! জুমআর দিনকে আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্য (সাপ্তাহিক) ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন (جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا)। তোমরা এদিন মিসওয়াক কর, গোসল কর ও সুগন্ধি লাগাও।’ (মুয়াত্তা মালেক, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)

– জান্নাতে প্রতি জুমআর দিনে জান্নাতিদের হাট বসবে। জান্নাতি লোকেরা সেখানে একত্রিত হবেন। সেখানে এমন মনমুগ্ধকর হাওয়া বইবে, যে হাওয়ায় জান্নাতিদের সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়ে যাবে এবং তাদের স্ত্রীরা তা দেখে অভিভূত হবে। অনুরূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি স্ত্রীদের বেলায়ও হবে। (মুসলিম)

>> জুমআর রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মারা যায়; আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেন।’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিন যথাযথভাবে নামাজ আদায়ে আগে আগে মসজিদে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। জুমআর দিনের ফজিলত ও বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।